শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

রাজীবের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রাজীবের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিনোদন ডেস্ক:

চলচ্চিত্রের প্রাণ যদি হয়ে থাকেন নায়ক-নায়িকা, তবে ভিলেন বা খলনায়ক হচ্ছেন সেই প্রাণের স্পন্দন। কারণ খলনায়ক না থাকলে নায়কের নায়ক হয়ে ওঠা যে হয় না! তাই চলচ্চিত্রে ভালো মানুষদের জয়জয়কার হয়ই মন্দ মানুষরা গল্পে থাকেন বলে। খলনায়কের চরিত্রে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রাজীব। চলচ্চিত্রের পর্দায় তার হিংস্রতা, নায়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংলাপ আর দুর্দান্ত অভিনয়ের সুবাদে তিনি নিজেকে দেশের অন্যতম গুণী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অসংখ্য কালজয়ী ও দর্শকনন্দিত ছবির ভিলেন রাজীব। অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে জিতেছিলেন চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মাত্র ৫২ বছর বয়সেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার মৃত্যু হয় ২০০৪ সালের আজকের দিনে। তিনি চলে যাওয়ার পর তার শূন্যতা পূরণ হয়নি। আবার তার সময়কার বা তার আগে যারা খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন তাদের মতো কেউ আসেনি চলচ্চিত্রে। যারা দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এত এত খলনায়কের মধ্যে কেবল একজনই নিয়মিত কাজ করছেন। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। অনেকে নিজেকে পর্দায় এনেছেন ভিন্ন আমেজে।

চলচ্চিত্র ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায় গোলাম মুস্তফা, খলিল, এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরীদি, সাদেক বাচ্চু, অমল বোস, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, জাম্বু, নাসির খানদের মতো খলনায়কদের দুর্দান্ত জনপ্রিয়তার প্রমাণ। তবে আফসোসের বিষয় হলো, একে একে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন এসব গুণী শিল্পী।

ষাটের দশকেই খলচরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন বরেণ্য অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। তার ভরাট কণ্ঠের সংলাপ ভয় জাগিয়েছে দর্শকদের মনে। যদিও চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও তিনি সমানভাবে সাফল্য কুড়িয়েছেন। তবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের খলনায়কদের তালিকা করলে তার নামটি চলে আসে প্রথম দিকেই। ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি এই অভিনেতা অর্জন করেন সম্মানজনক একুশে পদকও।

দর্শকদের কাছে জসীম জনপ্রিয় এখনো নায়ক হিসেবে। তবে তার শুরুটা হয়েছিল খলনায়কের ভূমিকায়। আর সে চরিত্রে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। সুঠাম দেহের ভিলেন হিসেবে তার অভিনয় সমৃদ্ধ করেছে খলচরিত্রের ইতিহাসকে। এর পর নায়করূপে কাজ করলেও জসীমের খলনায়কের ভূমিকা এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশনের পথপ্রদর্শক হিসেবে খ্যাত এই অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর।

ব্যতিক্রম ধাঁচে সংলাপ বলে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মিজু আহমেদ। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিনি খলনায়ক চরিত্রেই বেশি অভিনয় করেছেন। এ ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় স্বীকৃতিও। বছর তিনেক আগে দিনাজপুরে শুটিং করতে যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন মিজু আহমেদ। তার পর আর ফিরলেন না। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছুড়লেন না নতুন কোনো সংলাপ। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ তারিখটি তার চলে যাওয়ার দিন। ভয়ঙ্কর চেহারার ভিলেন হিসেবে ঢালিউডে পরিচিতি ছিল জাম্বুর। আসল নাম বাবুল গোমেজ। কিন্তু দর্শকদের কাছে তিনি জাম্বু নামে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকের বহু ছবিতে তার খলচরিত্রের অভিনয় দর্শকদের বিনোদিত করেছে। ২০০৪ সালের ৩ মে জাম্বু জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে।

দেশের অভিনয় জগতের অন্যতম কিংবদন্তি হুমায়ুন ফরীদি। সব চরিত্রেই তিনি সমান পটু ছিলেন। তবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের পর্দায় তার খলঅভিনয় এখনো দাগ কেটে আছে দর্শকদের মনে। তার দ্রুতলয়ে উচ্চারিত সংলাপ আর চোখ-মুখের ব্যতিক্রম সব কারুকার্য আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছিল। চলচ্চিত্র অঙ্গনে অসামান্য দ্যুতি ছড়ানো এই অভিনেতার প্রস্থান হয় ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যুর ছয় বছর পর তাকে ভূষিত করা হয় একুশে পদকে। অবশ্য জীবদ্দশায় তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।

না ফেরার দেশে গেছেন সাদেক বাচ্চু। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনিও সিনে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নায়ক হিসেবে। তবে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন খলনায়কের ভূমিকায়। ২০১৮ সালে তিনি খলচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ঢালিউডের খলনায়কদের মধ্যে সর্বশেষ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন কিংবদন্তি এটিএম শামসুজ্জামান। যদিও অনেক বছর আগেই এটিএম শামসুজ্জামান খলচরিত্রে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রেও আর সেভাবে দেখা যায়নি তাকে। এটিএম শামসুজ্জামান মাঝে মধ্যে ছোটপর্দায় কাজ করতেন।

আরেক খলঅভিনেতা ডিপজল কালেভদ্রে সিনেমায় কাজ করলেও ইতিবাচক কিংবা নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তাই দেশের চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে এখন কেবল অবশিষ্ট আছেন মিশা সওদাগর। ভিলেনরূপে তিনিই সর্বশেষ জনপ্রিয় ও সফল অভিনেতা। তার পর আর কেউ সর্বজনপ্রিয় খলনায়ক হয়ে উঠতে পারেননি। খলনায়ক হিসেবে মিশার ওপর নির্ভর করেই প্রায় ১০ বছর ধরে তৈরি হয়েছে ছবি। তার পরের কোনো উত্তরসূরি তৈরি হয়নি। কালেভদ্রে অমিত হাসান, ওমর সানীরা ভিলেন হয়ে কেবল চলচ্চিত্রের তালিকাই লম্বা করেছেন। কিন্তু বলার মতো সাফল্য বা অভিনয় কোথাও মেলেনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877